বাবা সুরেশ্বরী (রহঃ) এর কিতাব সূমহ

হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা রচিত কিতাব সমূহ 

হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা ছিলেন অত্যন্ত বুৎপত্তিময় কবি ও লেখক। তাঁহার রচিত বাংলা ও উর্দু কিতাবগুলি মারেফত রাজ্যের এক বিশাল ভান্ডার। গ্রন্থসমূহ রচনায় জলের মত তিনি ব্যবহার করিয়াছেন আরবী-ফার্সী-উর্দু এবং বাংলা ভাষাকে। বাংলায় রচিত কিতাবসমূহে যেমন মরমী মুর্শীদী কাব্যের সহজ ও সরলতম বুলি অর্নগল বলিয়া গিয়াছেন তেমনি উর্দু ভাষায়ও সুকঠিন বিষয়াদিকে বয়ান করিয়াছেন সাবলীল গতিতে। সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার গদ্য ও পদ্য সাহিত্যেও ফুল বাগীচায় পদচারণা করিলেই মনে হয় রুমী-তাবরীজি-সিরাজীর গজল সামায় জলসা বসিয়াছে। এই গ্রন্থগুলো পাঠকালে পাঠককে এলমে মারেফতের তত্বময়তার কথা স্মরণ করাইয়া দেয়। মারেফতের নিগুড় রহস্যময় এই ধরনের কিতাব বাংলা ভাষায় নিতান্তই দুর্লভ। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা উর্দু এবং ফার্সী ভাষার উপর অতিশয় পান্ডিত্য অর্জন করিয়াছিলেন। উর্দু ভাষায় রচিত তাহার কিতাবগুলি হাকিকত ও তাছাউফের এক অমূল্য রত্নখনি। যে কোন লেখকের পক্ষেই এই ধরনের তথ্যময় কিতাব লিখা শুধু দুঃসাধ্যই নয় রীতিমত অসম্ভব। এশ্কে ইলাহীতে ফানা হইয়া মারেফতের সকল স্তর পার হইয়াই শুধু এই গ্রন্থগুলিই লিখা সম্ভব কেননা তাঁহার রচিত সমস্ত কিতাব সমূহই ইলহামের মাধ্যমে নির্দেশিত ছিল। কিতাব রচনাকালেও তাঁহার অসংখ্য কারামত মানুষ প্রত্যক্ষ করিয়াছে। একবার তিনি রাত্রিকালে মোমবাতি জ্বালাইয়া হুজরা খানায় বসিয়া কিতাব লিখিতেছিলেন। হঠাৎ করিয়াই খাদেম সাহেবের মনে পড়িল যে মুর্শিদ ক্বিবলার আলো জন্য কোন অসুবিধা হইতেছে কিনা খোজ নেওয়া দরকার। তিনি হুজরা খানার ভিতরে উকি দিয়া দেখিলেন যে হযরতের বাম হাতের তর্জনী দিয়া আলো বিচ্চুরিত হইতেছে এবং সেই আলোতেই বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রাঃ) কিতাব রচনা করিতেছেন। কখনো কখনো অন্ধকার ঘরে বসিয়াও তিনি কিতাব রচনা করিতেন।  তাঁহার কলম ও কাগজের খস্ খস্ শব্দ শুনিয়া ভক্ত ও খাদেমগণ কিতাব রচনার বিষয়ে অনুমান করিতে পারিতেন। নিম্নে তাঁহার কিতাব সমূহের কিঞ্চিত বর্ণনা দৌয়া হইল। 

নূরেহক্ব গঞ্জেনূরঃ-

এই গ্রন্থটির প্রথম সংস্করন হযরত সুরেশ্বরী স্বয়ং মুদ্রিত ও প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্কারন তাঁহার পৌত্র হযরত জালাল নূরী প্রকাশ করিয়াছেন। ইহা তাছাউফ বা মারেফাত তত্বের উপর বাংলা ভাষায় নিগুড় ছন্দায়িত একখানি উচ্চাঙ্গে কাব্যগ্রন্থ। এই গ্রন্থের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেওয়া কেতাবী এলেমের পক্ষে সম্ভব নয়। এই গ্রন্থ পাঠকালে পাঠকের মনে ইমাম গাজ্জালী, আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমির ‘মছনবি শরীফ’, হযরত মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবির ‘মফতুহাতে মাক্কিয়া’ এবং হযরত সামছে তাবরেজ, হযরত ফরিদ উদ্দিন আত্তার ও হযরত বু’আলি শাহ্ কলন্দরের মসনবির মারেফত তত্তময়তার কথা স্মরণ করইয়া দেয়। মারেফতের নিগুড়তম রহস্যময় এই ধরনের গ্রন্থ বাংলা ভাষায় দ্বিতীয়টি পাওয়া অসম্ভব। ইহা লিখিতে হইলে মা’রেফত রাজ্যের অতি উচ্চস্তরের অলী ছাড়া সম্ভব নয়। 

ছফিনায়ে ছফরঃ-

এই গ্রন্থখানি ত্বরিকত পন্থির পথ চলার পাথেয়। প্রত্যেক মারেফত পন্থীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উচ্চাঙ্গের একটি গ্রন্থ। একজন ত্বরিকত পন্থীর পথের যাবতীয় প্রযোজনীয় সম্বল এই গ্রন্থে বিদ্যমান রহিয়াছে। এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু ইহার নামকরনেই বিদ্যমান রহিয়াছে, জ্ঞানি মাত্রেই তাহা পাঠ করতঃ বুঝিতে পারিবেন।

কাওলোল কেরামঃ-

ইহা একখানি দলিল ও যুক্তিপ্রমাণ সর্বস্য গ্রন্থ। সেজদায় তাজেমী, পীরের রাবেতা, গান-বাজনা, ওয়াজ্দ হাল, পীরের প্রতি কর্তব্য এবং তাছাউফের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বিশদভাবে বিস্তৃত হইয়াছে। ত্বরিকত পন্থীদের জন্য গ্রন্থটি অতীব প্রয়োজনীয়। অত্যন্ত দুঃখের সহিত জানাইতে হইতেছে এই গ্রন্থখানি এখনও মুদ্রিত হয় নাই। 

মদিনা-কল্কী অবতারঃ-

হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলার বাংলা ভাষায় রচিত এই গ্রন্থখানিতে আখেরী ইমাম হযরত মেহেদী (আঃ) এর আবির্ভাব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ এর হাদিস এবং বিভিন্ন অলীয়ে বরহক্বদের মতামত অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করা হইয়াছে। এই গ্রন্থখানী হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা নিজেই মুদ্রিত ও প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন।

সিররেহক্ব জামেনূরঃ-

ইহা উর্দু ভাষায় রচিত অমূল্য গ্রন্থ। এই গ্রন্থের পর্যালোচনা করা দুঃসাধ্য ব্যপার। বর্তমানে এইরূপ উচ্চাঙ্গের হাকিকত ও মারেফতের সু-স্পষ্ট বর্ণনা সহসা অন্য কোন ভাষা অথবা অন্য কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। হযরত সুরেশ্বরী নিজেই এই গ্রন্থখানি প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন। দ্বিতীয় খন্ড এখনও প্রকাশিত হয় নাই। এই গ্রন্থে নূরে ওহাদানিয়াত, কাইফিয়াত, তকদিরের মিমাংশা, কুদরত, গান-বাজনা, ওয়াজ্দ ও হাল প্রভৃতি তাছাউফের অতিশয় প্রয়োজনীয় ও দুর্লভ পরিচ্ছেদ সমূহ রহিয়াছে। পাঠক মাত্রই এই গ্রন্থের মর্ম ও তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিবেন। গ্রন্থখানি হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ জালাল নূরী (রাঃ) এর মুরীদ ও খলিফা মাওলানা মোহাম্মদ সাদেক বাংলা ভাষায় তর্জমা করিয়াছেন।

আইনাইনঃ-

উর্দু ভাষায় রচিত সুরেশ্বরী ক্বিবলার এই গ্রন্থখানী অলী আউলিয়ার অমরত্ব, ফাতেহা নেয়াজ, মাজার শরীফের আদব ও হেফাজতের কথা কোরআনের আয়াত দ্বারা অত্যন্ত তীক্ষèভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন। এই গ্রন্থখানিও হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী স্বয়ং মুদ্রিত ও প্রকাশিত করিয়া গিয়াছেন। 

ছরহে-ছদুরঃ-

এই কিতাবখানিও উর্দু ভাষায় রচিত। হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রাঃ) এই কিতাবে তাহার মুর্শিদ ক্বিবলা, মুর্শিদের দরবার এবং তাহার কতিপয় পীরভাইদের সম্মন্ধে বিষদভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। অত্যন্ত দুঃখের সহিত জানাইতে হইতেছে এই গ্রন্থখানি এখনও মুদ্রিত হয় নাই।

লাতায়েফে শাফিয়াঃ-

উর্দু ভাষায় রচিত এই কিতাবখানিতে। হযরত মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব রচিত তাছাউফ সংক্রান্ত কতিপয় গ্রন্থের সমালোচনা করিয়াছেন। এই গ্রন্থে তিনি ওহাবী মতবাদের অসারতা নিপুনভাবে প্রমাণ করিয়াছেন। ইহা একখানি সমালোচনা মূলক গ্রন্থ। হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা (রাঃ) স্বয়ং অত্র গ্রন্থখানি মুদ্রিত ও প্রকাশ করিয়াছেন। 

মাতলাঊ’ল ঊ’লুমঃ-

শরীয়ত, ত্বরিক, হাকিকত এবং মারেফতের এক বিশাল ভান্ডার এই উর্দু ভাষায় লিখিত গ্রন্থখানি। হযরত শাহ্ সূফী জালাল নূরী (রাঃ) এর মুরীদ ও খলিফা মাওলানা সাদেক সাহেব এই গ্রন্থখানির অনুবাদ করিয়াছেন।


পূর্ন কিতাব সমূহ পাঠের জন্য নিচের মেনুতে প্রবেশ করুন।

 নূরেহক্ব গঞ্জেনূর

 সিররেহক্ব জামেনূর

মাতলাউ’ল ঊ’লূম

ছফিনায়ে ছফর

লাতায়েফে শাফিয়াহ্

মদিনা (কল্কী অবতারের ছফিনা)

আইনাইন

Additional information